হাবিবুর রহমান: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম গত ১৯ জানুয়ারি সকাল ১১.০০ টায় গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বাংলাদেশের ৪৯ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণের সাথে বৈঠক  করেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশের পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতি  বিষয়ে আলোচনা করেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম এই মতবিনিময় সভায় রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। রবি উপাচার্য উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৮ই মে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মহান স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর  বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের অমর স্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশে কবিগুরুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের, আপনি সেই স্বপ্নপূরণ করে কবিগুরুর নিকট বাঙালির যে ঋণ রয়েছে তার কিছুটা শোধের ব্যবস্থা করেছেন । এখানে বলা প্রয়োজন যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে  একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে  বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সেই মুহূর্তে আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। যোগদানের পরে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হই।
প্রফেসর ড. শাহ্ আজম বলেন,  আরো একটি বছরের নিরলস পরিশ্রমে বিভাগগুলোর চূড়ান্ত  পরীক্ষা সমাপ্ত হয় এর মধ্য দিয়ে আমরা  তিনটি বিভাগের গ্রাজুয়েট তৈরি করতে সক্ষম হই। আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় নানা সংকট রয়েছে তদুপরি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে অস্থায়ী অবকাঠামোমূলক সুযোগ সুবিধা তৈরি এবং কিছু সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠনের চর্চার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশ দেবার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ছিলাম সব সময়। তারপরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকা অবস্থায় আমাদের প্রথম গ্রাজুয়েটরা ক্যাম্পাস  সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হলো,যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপন প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি এবং তা নিরীক্ষাধীন রয়েছে। আপনার আনুকূল্য পেলে নিশ্চয়ই আপনার তৈরি প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবে, যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনাবিল আনন্দে রবীন্দ্র এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চর্চা করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন যে, আমরা যেভাবে দেখেছিলাম  মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পরে আপনার হাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হতে। আমাদের প্রত্যাশা, তেমনিভাবে আপনার হাতেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে । তাঁর বক্তৃতায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতি,  দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক  বিনিময়, যুবসমাজের  মাদকাসক্তি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রাম প্রভৃতি বিষয় স্থান লাভ করে।
রবি উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর  একটি সময়োচিত এবং যথাযথ উদ্যোগ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনার মানউন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন,যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আঞ্চলিক পর্যায় স্থাপিত হয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং বা ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভীষণ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রেই এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং বা ইন্টার্নশিপ ট্রেনিং ছাড়াই তাদের গ্রাজুয়েট হতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ করে যদি একটি আইন পাস করা যায় যে প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্যাপাসিটি তারা ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন তাহলে হয়তো সারা বাংলাদেশে এই ইন্টার্নশিপ এর সংকটটি দূর হবে। এটি হলে বাংলাদেশে বাস্তব কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি করা সম্ভব হবে।
রবি উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অঙ্গীকার করে পথ চলছে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রবীন্দ্রানুরাগ এবং সংস্কৃতিপ্রেম আমাদের পাথেয়। তিনি প্রত্যাশা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার স্নেহের হাতটি বাড়িয়ে দিবেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে শাহজাদপুর আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের  বক্তৃতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রতি তার যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা রয়েছে তা  ব্যক্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে গুণগত শিক্ষা, মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি করে  চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার  প্রতি উপাচার্যদের আহবান  জানান।
এসময় আরো আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ডুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর  হাবিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের কোষাধ্যক্ষ শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশিদ ভুঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার,   জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর মশিউর রহমান প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন মাননীয়  শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।